Study Abroad!
তোমাদের অনেকেরই নিশ্চয়ই স্বপ্ন যে স্কুল কলেজের পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমানো। অলিম্পিয়াড কমিউনিটিতে কিন্তু এবিষয়টা বেশ স্বাভাবিক বলেই ধরা হয়। প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে অনেক ছেলেমেয়েই উচ্চশিক্ষার জন্য হার্ভার্ড, এমআইটি, প্রিন্সটন থেকে শুরু করে অনেক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমায়।
কিন্তু দুঃখের বিষয়টা হল বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছাত্রদেরই উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আবেদনের প্রক্রিয়া, কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, কী কী পরীক্ষা দিতে হয়– এগুলো বিষয়ে ধারণা একেবারে শূণ্যের কোঠায়। তারওপরে আবার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল বলে এগুলো নিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য লেখা রিসোর্স খুঁজে পাওয়া একেবারেই দুঃসাধ্য। এছাড়াও অনলাইনে খোঁজ করলে যেসব তথ্য পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকার স্কুল-সিস্টেমের জন্য লেখা বলে একজন সাধারণ বাংলাদেশি ছেলে বা মেয়ের পক্ষে আগে থেকে জানা না থাকলে সেগুলোর মর্ম উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এর ফলাফল? এর ফলাফলটা হচ্ছে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে কিছু ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়ে এবং অতিসামান্য কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা ছাড়া কেউ ক্লাস ১২ এর পরে বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনই করে না/ করতে পারে না।
কিন্তু এটা এরকম না হলেও পারে। আমরা বিশ্বাস করি সঠিক তথ্য এবং গাইডলাইন পেলে বাংলাদেশের সাধারণ ছেলেমেয়েরাও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পেতে পারে। প্রতিবছর যেই ছেলেমেয়েগুলো দেশের বাইরে পাড়ি জমায় তাদের কারো মস্তিষ্কেই সাধারণ ছেলেমেয়েদের চেয়ে বেশি নিউরণ আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। শুধু পার্থক্যটা হচ্ছে যে তারা তাদের পারিপার্শিক থেকে আমেরিকা/অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য কী করতে হয় সেটা অনেক আগে থেকেই জানে ও সেই অনুযায়ী খুব ভালো মত প্রস্তুতি নেয়। অর্থাৎ, সামান্য একটুখানি তথ্যের অভাবে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়ে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটাতে পড়ার সুযোগ হারায়। আমরা চাই প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইররে পাড়ি জমাক। আমাদের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের প্রয়াস হিসেবেই আমরা এই পোর্টালটা তৈরি করেছি।
আমরা এই পোর্টালটা এমনভাবে তৈরি করেছি যাতে করে কেউ যদি বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ব্যাপারে যদি একেবারে কিছু না-ও জেনে থাকে তাও যেন পড়ে এই ব্যাপারে একটা ভালো ধারণা নিয়ে সাথে সাথে কাজে লেগে যেতে পারে। বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়াটা বেশ আলাদা ধরণের। তাই ঠিক কিভাবে আবেদন করতে হয়, সেটা বলার আগে আমরা পেছনের কিছু টুকিটাকি বিষয় আগে ব্যাখ্যা করে নিচ্ছি।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথমত একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। বাংলাদেশ স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যেটা বোঝানো হয়, বাইরের দেশে এই শব্দগুলো দিয়ে আসলে সেগুলো বোঝানো হয় না। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে স্কুল হচ্ছে ক্লাস ১ থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত (বাংলাদেশে যেটা ক্লাস ১০ পর্যন্ত)। অন্য দেশগুলোতে হাইস্কুল বলতে ক্লাস ৯ থেকে ক্লাস ১২ কে বোঝানো হয়। কাজেই এখানে এবং আবেদনের প্রতিটি পর্যায়ে যতবার-ই হাইস্কুল শব্দটা শুনবে, ততবার-ই বুঝবে যে আমরা ক্লাস ৯ থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত বোঝাচ্ছি (বাংলাদেশের মত ক্লাস ৬ থেকে ক্লাস ১০ পর্যন্ত না)।
তাহলে কলেজ বলতে ওদের দেশে কী বোঝানো হয়? বিদেশে কলেজ বলতে আসলে আন্ডারগ্রাজুয়েটকেই বোঝানো হয়। মানে ক্লাস ১২ শেষ করার পরে বাংলাদেশি নিয়মে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, বাইরের দেশের নিয়মে ওটাকেই বিশ্ববিদ্যালয় না বলে কলেজ নামে ডাকা হয়। কোনোকারণে একমাত্র বাংলাদেশেই ক্লাস ১১-১২ কে কলেজ বলে ডাকা হয়, যেটা বিশ্বের অন্যান্য দেশের হিসাবে হাইস্কুল। তোমরা যদি কেউ ভারতীয় সিনেমা (যেমন থ্রি ইডিয়টস) দেখে থাকলে দেখবে যে নায়ক বা নায়িকা কলেজে পড়াশোনা করছে। অনেকে ভুলবশত ওটাকে ক্লাস বাংলাদেশি হিসেবে ক্লাস ১১-১২ মনে করে। কিন্তু আসলে ভারতেও কলেজ বলতে বাংলাদেশের হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ই বোঝানো হয়।
অন্য দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে মূলত মাস্টার্স, পিএইচডি বা পোস্টডক এগুলো যেই প্রতিষ্ঠানে হয়, সেগুলোকে বোঝানো হয়।
আচ্ছা, তাহলে যখন আমরা টিভিতে শুনি যে মার্ক জুকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়াকালীন ফেসবুক খুলেছিলেন, তখন কী বোঝানো হয়? তখন আসলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলতে হার্ভার্ডের বিশ্ববিদ্যালয় অংশটাকে বোঝানো হয় না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছে হার্ভার্ড কলেজ, আন্ডারগ্রাজুয়েটের ছেলেমেয়েরা আসলে সেখানে আবেদন করে, এবং হার্ভার্ড কলেজেই পড়াশোনা করে, হার্ভার্ডের বিশ্ববিদ্যালয় অংশে না।
হার্ভার্ডের অধীনে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ দুটোই আছে, সব ক্ষেত্রে যে তা হবে তা না। যেমনঃ অ্যামহার্স্ট কলেজ বা সবগুলো লিবারেল আর্টস কলেজ হচ্ছে শুধু কলেজ, এখানে শুধু আন্ডারগ্রাজুয়েটই পড়ানো হয়। অ্যামহার্স্ট এর মত আমেরিকাতে আরো অনেক লিবারেল আর্টস কলেজ আছে; আবেদনের সময় তুমি সেগুলোতেও আবেদন করতে পারো (শুধু কলেজ বলে যে এগুলোর পড়াশোনার মান কিংবা খ্যাতি কোনোটাই কিন্তু কম না! এটা সবসময় মাথায় রেখো)।
মোটকথা, এখন থেকে আমরা এই প্রক্রিয়াটাকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়া বলব না; আমরা বলব কলেজে আবেদন প্রক্রিয়া।
স্কলারশিপ?
আমরা যখনই বাইরের দেশের কলেজে (মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে) আবেদন নিয়ে কথা বলি, তখনই সবার আগে যেই প্রশ্নটা পাই, “ভাই ফুল স্কলারশিপে কিভাবে অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে পারি?”
বাইরের দেশে আবেদন নিয়ে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে, নাম Bangladeshis Beyond Border: Undergraduate Admission Portal (গ্রুপটাতে জয়েন করো। আমরা এই পেজে এখন থেকে এটাকে BBB বলব)। ওখানে এই ধরণের প্রশ্ন অনেক ছেলেমেয়েই না বুঝে করে বসে এবং বাজেভাবে ট্রলের শিকার হয়। সত্যি বলতে কি, এই প্রশ্নটা আসলেও খুবই খারাপ একটা প্রশ্ন। কেন?
প্রথমত, স্কলারশিপ কথাটা বলতে আসলে ‘মেধাবৃত্তি’ বোঝানো হয়। যেমন বাংলাদেশে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার মার্কের ওপর নির্ভর করে যারা বেশি মার্ক পায়, তাদেরকে কিছু টাকা দেওয়া হয়।
কিন্তু বিদেশে (অন্তত আমেরিকায়) এটা এভাবে কাজ করে না। আমেরিকায় এটা যেভাবে কাজ করে সেটা একটু ভালোমতো বোঝার চেষ্টা কর।
প্রথমত যেটা বোঝো, যে আমেরিকা বা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কলেজের (বিশ্ববিদ্যালয়ের) পড়াশোনা ফ্রী না। কলেজে পড়তে গেলে প্রতিবছর প্রচুর টিউশন ফী দিতে হয়। যেমন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফী হচ্ছে প্রতিবছর 50420 আমেরিকান ডলার। এর সাথে যদি থাকা খাওয়ার খরচ যোগ কর, তাহলে সেটা বছরে 70000 ডলারের কাছাকাছি প্রায়। আমেরিকার প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাই এরকম। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো দিক বলতে এই একটাই; এখানে পড়াশোনা মোটামুটি ফ্রী। আর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফী-ও একেবারেই মামুলি।
এখন তোমরা যারা এই পোস্টটা পড়ছো, তাদের প্রায় সবার বছরে ৭০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করে পড়তে যাওয়ার মত সামর্থ হয়ত নেই। এখানেই আসে Financial Aid এর পাওয়ার প্রশ্ন। খেয়াল কর, শব্দটা কিন্তু Financial Aid, স্কলারশিপ না। বাংলাদেশ থেকে যারা বাইরের দেশে পড়তে যায়, তাদের বড় একটা অংশ ফাইনান্সিয়াল এইড নিয়েই যায়।
ফাইনান্সিয়াল এইড কিভাবে কাজ করে এবং কারা পায়?
সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটা হচ্ছে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফাইনান্সিয়াল এইড মেধাভিত্তিক না, বরং প্রয়োজন ভিত্তিক (Need Based)। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময় ওরা তোমার বাবা মায়ের আয়করের কাগজ দেখতে চাইবে। যদি তোমার পরিবার যদি খুবই বিত্তশালী হয় এবং পুরো টিউশন ফী দেওয়ার সামর্থ থাকে, তবে তুমি ওখানে চান্স পেলে কলেজ তোমাকে এক ডলার ফাইনান্সিয়াল এইড ও দেবে না।
কিন্তু যদি তুমি যদি বিত্তশালী না হও, তখন তোমার বাবা মায়ের ট্যাক্স ফাইল দেখে তোমার যতটুকু দরকার ততটুকুই ফাইনান্সিয়াল এইড দেবে।
আরেকটু ব্যাখ্যা করি। মনে কর, তোমার বাবা-মায়ের বাৎসরিক আয় ২০ হাজার ডলার, এবং তোমাদের পরিবারের একবছরের খরচ ১০ হাজার ডলার। তখন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে তোমাকে প্রতিবছর ১০ হাজার ডলার টিউশন ফী হিসাবে দিতে হবে; আর বাকিটাকাটা কলেজ থেকে তোমাকে ফাইনান্সিয়াল এইড হিসেবে দেওয়া হবে।
যদি এমন হয় যে, তোমার পরিবারের আয় বছরে ৭ হাজার ডলার, আর খরচও মোটামুটি ৭ হাজার ডলারের মত। এই অবস্থায় যদি তুমি চান্স পাও, তাহলে পুরো ফাইনান্সিয়াল এইডই পেয়ে যাবে– মানে তোমার কোনো খরচ থাকবে না। অনেকসময় যাদের বিমান ভাড়া দেওয়ার টাকাটাও নেই, তাদেরকে বিমানভাড়াটাও দিয়ে দেয় কলেজ থেকে।
খেয়াল কর, ফাইনান্সিয়াল এইড আর স্কলারশিপের পার্থক্যটা। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো তাদের ভর্তিকৃত ছেলেমেয়েদেরকে মেধা দিয়ে কখনোই র্যাঙ্ক করে না। মানে ভর্তিকৃত ছাত্রদের মধ্যে একজন কম মেধাবী, একজন বেশি মেধাবী এই বৈষম্য ওখানে করা হয় না (এই খারাপ কাজটা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার সময় মেধাতালিকা করার মাধ্যমে করা হয়)। কাজেই ফাইনান্সিয়াল এইডও মেধাভিত্তিক না। অর্থাৎ, তুমি যেই হও না কেন, ফান্ড পাওাটা নির্ভর করছে শুধুমাত্র তোমার পরিবারের সামর্থের ওপর, তথাকথিত ‘মেধা’ বা এরকম কিছুর ওপরে না। তুমি যদি চান্স পাও, তাহলে টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।
তবে...
আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজের পরিমাণ অনেক। কিন্তু তাদের মধ্যে সবাই এভাবে ফাইনান্সিয়াল এইড দেয় না। সত্যি বলতে বেশিরভাগ কলেজই দেয় না (তার মানে এটাও না যে মেধাভিত্তিক বৃত্তি দেয়)। যেগুলো কলেজ ফাইনান্সিয়াল এইড দেয় না, সেখানে টাকা দিয়ে পড়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কোনো কলেজ ফাইনান্সিয়াল এইড দেবে কি দেবে না, সেটা নির্ভর করে ঐ কলেজ কত বড়, তাদের নিজেদের আয়, ডোনেশন, বাজেট এগুলো কতবড়।
তাহলে কীভাবে জানবো যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ফাইনান্সিয়াল এইড দেয়?
যেই কলেজগুলো ফাইনান্সিয়াল এইড দেয়, তাদেরকে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়ঃ Need Blind এবং Need Aware কলেজ।
Need Blind কলেজ
Need Blind কলেজগুলো অ্যাডমিশন আর ফাইনান্সিয়াল এইড সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ– মানে তুমি ফাইনান্সিয়াল এইড হিসেবে কত টাকা চাচ্ছো এটা তোমার অ্যাডমিশনকে প্রভাবিত করবে না। একটা উদাহরণ দেই। ধর, তুমি যেই কলেজে আবেদন করলে সেটার টিউশন ফী বছরে ৬৩ হাজার ডলার। এখন অনেক আবেদনকারী থাকবে যারা পুরো ৬৩ হাজার ডলারই দিতে পারবে, আবার অনেকে থাকবে যারা হয়ত বছরে ১ হাজার ডলারও দিতে পারবে না (এবং প্রায় পুরো টাকাটাই ফাইনান্সিয়াল এইড চাইবে)। Need Blind কলেজগুলোর বৈশিষ্ট হচ্ছে, ভর্তির সময় তুমি কতটাকা দিতে পারবে এটা তোমার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনাকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করবে না। মানে যে পুরো টিউশন ফী টাই দিতে পারবে, আর যার এক হাজার ডলারও দেওয়ার সামর্থ নেই, তাদের দুইজনের কেউই কোনো সুবিধা বা অসুবিধায় পড়বে না।
ব্যাপারটা কত সুন্দর, তাই না?
আসলে না। এখানে একটু সমস্যা আছে। আমেরিকার অনেকগুলো কলেজ Need Blind থাকলেও, তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচটা কলেজ বাইরের দেশের আবেদনকারীদের জন্যে নীড ব্লাইন্ড। এছাড়া কিছু Need Blind কলেজ আছে যেগুলো শুধু আমেরিকা, কানাডা আর মেক্সিকার নাগরিকদের জন্য নীড ব্লাইন্ড।
আমি ধরে নিচ্ছি তুমি বাংলাদেশের নাগরিক। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য আন্ডারগ্রাজুয়েটে শুধুমাত্র এই পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ই নীড ব্লাইন্ডঃ
১। হার্ভার্ড; ২। এমআইটি; ৩। ইয়েল; ৪। প্রিন্সটন; ৫। অ্যামহার্স্ট;
অর্থাৎ, এরা ভর্তির সময় তুমি কতটাকা দিতে পারছো এটা বিবেচনা করে না। তবে এই পাঁচটা কলেজই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচটা। তাই এখানে চান্স পাওয়াটাও খুবই কঠিন (তবে মোটেও অসম্ভব কিছু নয়)।
Need Aware কলেজ
Need Aware কলেজগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরাও ফাইনান্সিয়াল এইড দেয়, তবে অ্যাডমিশনের সময় তারা টাকার বিষয়টা বিবেচনা করে। আগের উদাহরণটাই মনে কর– দুজন আবেদনকারীর মধ্যে একজন বছরে পুরো টিউশন ফী টাই দিতে পারবে, আরেকজন মাত্র ১০০০ ডলার দিতে পারবে। Need Aware কলেজের ক্ষেত্রে, ভর্তির সময় প্রথমজন কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে কতটুকু সুবিধা পাবে, কিংবা আদৌ পাবে কিনা এটা নির্ভর করছে তার প্রোফাইলের বাকি সবকিছুর ওপরে।
একটা বিষয় এতক্ষণে বুঝে গেছো যে বাংলাদেশ থেকে যারা বাইরে পড়তে যায়, তাদের বড় একটা অংশই Need Aware কলেজে পড়তে যায় (কারণ Need Blind কলেজ মাত্র পাঁচটা, ওই পাঁচটাতে বছরে গড়ে মোটে ৪-৫ জন এর মতই যেতে পারে)। Need Aware কলেজ একটু ‘অর্থলোভী’ হলেও বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এপর্যন্ত এগুলোতে ফুল-ফান্ডিং এই পড়তে গিয়েছে। মনে রাখো, এরা চান্স পাওয়ার আগে এটা বিবেচনা করে যে তুমি কতটাকা দিতে পারবে; যদি চান্স পাও তারপর কিন্তু তোমাকে যতটুকু দরকার ততটুকু ফাইনান্সিয়াল এইড ওরা অবশ্যই দেবে।
তোমরা অনেকেই ভাবছো, এই পুরো বিষয়টাতো শেষ পর্যন্ত মেধাভিত্তিকই হয়ে গেলো; কারণ ফান্ডিং পেতে হলে চান্স পেতে হবে, আর যারা একটু কম সামর্থবান তারা Need Aware কলেজের অ্যাডমিশনে একটু কম সুবিধা পাবে। এটা আসলে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যখন দুইজন আবেদনকারীর প্রোফাইলের বাকিসবকিছু একই রকম, তখন কলেজগুলো যে বেশি টাকা দিতে পারবে তাকেই নেয় সচরাচর। এজন্য সচরাচর খুবই শক্তিশালী প্রোফাইল না থাকলে এগুলোতে ফান্ডিংসহ অ্যাডমিশন পাওয়াটা আসলেই কঠিন (তাই বলে মনে কোরো না যে Need Blind গুলোতে চান্স পাওয়াটা সহজ। এটা মোটেই না।) আমেরিকার কলেজে চান্স পাওয়ার গোল্ডেন রুলটা হচ্ছেঃ ভালো প্রোফাইল নিয়ে অ্যাডমিশন পাওয়া খুব কঠিন, অ্যাডমিশন পাওয়ার জন্য তোমার প্রোফাইল অসাধারণ হওয়া দরকার।
Need Aware কলেজের মধ্যে যারা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ফান্ডিং দেয়, তাদের দুটো তালিকা এই লিঙ্কে দেওয়া আছে দেখে নাও। খেয়াল কর, Need Aware কলেজের সংখ্যা আসলেই অনেক। আর এই ডকুমেন্ট দুইটা BBB ফেসবুক গ্রুপ থেকে নেওয়া। ওদের ফাইল সেকশনে এরকম আরো অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস পাবে। তাই এখানে সবকিছু পড়ার পাশাপাশি তোমরা গ্রুপের ফাইল সেকশনের ডকুমেন্টগুলোও মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিও একটু। (তবে হ্যাঁ, ফাইল সেকশনে টুকিটাকি কিছু ভুল তথ্যপূর্ণ ডকুমেন্টও আছে। কাজেই একটু সাবধান)।
কোন কলেজ ফাইনান্সিয়াল এইড দেয় আর কোনটা দেয় না এটা জানার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উপায়টা হচ্ছে ঐ কলেজের ওয়েবসাইটে যেয়ে দেখা। যদি তোমার পছন্দের কলেজের তালিকা BBB গ্রুপের লিস্টে না থাকে, বা তোমার সন্দেহ হয়, অবশ্যই ওয়েবসাইটে যেয়ে দেখে আসবে।
কলেজগুলো কী দেখে?
আমেরিকার কলেজে অ্যাডমিশন টেস্ট বলে কিছু নেই; তাই আমেরিকার কলেজ ভর্তির সময় অনেকগুলো আলাদা আলাদা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অ্যাডমিশন ডিসিশনগুলো নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটাকে ওরা হলিস্টিক প্রসেস বলে, কারণ এখানে কোনো একটা বিষয়ের ওপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয়না; আবেদনকারীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা, স্কুল, এগুলো সবকিছু বিবেচনা করেই অ্যাডমিশন ডিসিশন দেওয়া হয়। তবে আমরা একটা আবেদনের সব ভেরিয়েবলগুলোকে মোটাদাগে কয়েকভাগে ভাগ করতে পারিঃ
ক) এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ
খ) SAT কিংবা ACT
গ) College Essay
ঘ) রিকমেন্ডেশন লেটার
ঙ) স্কুলের রেজাল্ট
আবেদনের প্রক্রিয়া
আমেরিকার কলেজে আবেদনের প্রক্রিয়াটা বেশ লম্বা। এবং এখানে বর্ণনা করতেও অনেক সময় লেগে যাবে। তবে এম.আই.টি র বৃষ্টি শিকদার আপু আগে থেকেই আবেদনের প্রক্রিয়া নিয়ে একটা লম্বা প্লেলিস্ট বানিয়ে রেখেছে। ওটা দেখলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। প্লেলিস্টটার ভিডিওগুলো এখানে দেওয়া হল। তোমরা চাইলে এই লিঙ্কে গিয়ে ইউটিউব থেকেও দেখে নিতে পারো।
প্রথম কয়েকটা ভিডিওতে আমরা এতক্ষণ যেগুলো আলোচনা করলাম, সেগুলোই সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সরাসরি আবেদনের প্রক্রিয়ার অংশ দেখতে চাইলে 06 নম্বর ভিডিও থেকে দেখা শুরু কর।
01 USA Application (Undergraduate)
02 Myth Busting
03 Classifications of Students
04 Classification of Universities
05 Financial Aid
06 SAT Exam
07 SAT I Preparation
08 SAT II Preparation
09 TOEFL Logistics
10 TOEFL Preparation
11 The Application: Your Part
12 The Application: Your College's Part
13 Recommendation Letters
14 How Recommendation Letters are Written
15 Submitting Recommendation
16 Extra Curricular Activities
17 Essays
18 Financial Aid Application
19 Requirement Checklist
20 Success Story
21 My Story
এই পোর্টালটা আপাতত সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল। তবে, এটা এখনো অসম্পূর্ণ। আমাদের পরিকল্পনা আছে এখানে আরো অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করা। তোমরা বৃষ্টি আপুর প্লেলিস্টটা দেখে নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানতে পেরেছো। সত্যি বলতে কি, বৃষ্টি আপুর এই প্লেলিস্টটা আমাদের কাজকেও অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। এতকিছু আলাদা করে লেখাটাও আমাদের জন্য অনেক কষ্টের হতো।
পরবর্তীতে আমরা এখানে SAT এর প্রিপারেশনের বিস্তারিত যোগ করব। এছাড়া ECA এবং Essay নিয়েও আরো অনেক কিছু যোগ করা হবে।